Skip to main content

থানায় পুলিশ মামলা না নিলে প্রতিকার কী?

থানায় পুলিশ মামলা না নিলে প্রতিকার কী? ফৌজদারি মামলার একটা বড় অংশের কার্যক্রম শুরু হয় থানায় এজাহার দায়েরের মধ্য দিয়ে। আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর কোনো নাগরিক থানায় মামলা করতে চাইলে পুলিশ বিনামূল্যে সে মামলা নিতে বাধ্য। কোনো কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থানায় মামলা নিতে না চাইলে সংক্ষুব্ধ নাগরিক কী করবেন? সে বিষয়টি তুলে ধরে হলো। থানায় মামলা অপরাধ সংঘটনের পর বিচারপ্রার্থীর প্রথম কাজ হলো থানায় মামলা দায়ের করা। এর পর মামলা তদন্তের মাধ্যমে শুরু হয় বিচারকাজ। পুলিশ বিনামূল্যে সে মামলা নিতে বাধ্য। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, প্রভাবশালীদের চাপে থানার পুলিশ মামলা নিতে চায় না। মামলার বাদী তুলনামূলক দুর্বল হলে থানার পুলিশ এ ধরনের আচরণ করে থাকে বলে অভিযোগ শোনা যায়। দৃশ্যপট-১ নিজে একজন নারী ও পুলিশ সদস্য। তিনি গণধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন অপর এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে, যিনি তাঁর সাবেক স্বামী। পুলিশ হওয়া সত্ত্বেও ধর্ষণের মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ তা নেয়নি। দৃশ্যপট-২ রেহানাকে (ছদ্মনাম) নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত তারই সহপাঠী অর্ণব (ছদ্মনাম)। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে রেহানাকে বাজে প্রস্তাব দেয় অর্ণব। প্রতিবাদ করলে অন্য সহপাঠীদের সামনে তার শ্লীলতাহানি করে বসে অর্ণব। এ ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে রেহানা অভিমান করে আত্মহত্যা করে বসে। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে বিষয়টি বর্ণনা করে একটি মামলা করে। মৃত্যুর আগে রেহানা নিজের সুইসাইড নোটে এই পরিণতির জন্য অর্ণবকে দায়ী করে। রেহানার বাবা-মা থানায় গিয়ে এ সুইসাইড নোটটি আমলে নিয়ে অর্ণবকে আসামি করতে চাইলে পুলিশ তা আমলে নিতে গড়িমসি করে। অর্ণবের বাবা স্থানীয়ভাবে প্রতাপশালী হওয়ায়, আগে থেকেই তিনি থানাকে হাতে রেখেছিলেন। অন্যদিকে নিজের আদরের মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না দেখে রেহানার বাবা-মা ভেঙে পড়েন। প্রতিকার কী? এ রকম অবস্থায় আইনের বিধান কী? পুলিশ যদি মামলা নিতে নাই চায়, সে ক্ষেত্রে তাদের বাধ্য করার মতো কোনো সুযোগ আছে কি? হ্যাঁ, চারটি উপায়ে পুলিশের নির্লিপ্ততার বিরুদ্ধে ভিকটিম বা ভিকটিমের পরিবার প্রতিকার পেতে পারেন। পর্যায়ক্রমে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা থানায় পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে একজন ভালো আইনজীবীর পরামর্শক্রমে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা যেতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় মামলা করলে আদালতে সংশ্লিষ্ট থানাকে মামলাটি রুজুপূর্বক তদন্তের নির্দেশ দেবে এবং আদালতের এ নির্দেশ মানতে বাধ্য। অন্যসব পন্থার মধ্যে এটি সহজতর এবং এতে সময় কম অপচয় হবে, অর্থনীতিক ঝুঁকিও কমবে। হাইকোর্টে মামলা দ্বিতীয় প্রক্রিয়া হলো থানা পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে প্রতিকার চাওয়া যায়। রিট আবেদনে ভিকটিম বা তার পরিবার থানায় মামলা দায়েরের অনুমতি প্রদান ও আসামিদের গ্রেফতারের আদেশ প্রার্থনা করতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগ রায় প্রদান করলে পুলিশ রায় মানতে বাধ্য। মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে প্রতিকার চাওয়ার তৃতীয় মাধ্যম হলো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এ ছাড়া বেসরকারি মানবাধিকার কমিশনের কাছেও এ ধরনের অভিযোগ দেওয়া যায়। বিশেষ করে নারী নির্যাতন ও মানবিক বিষয়গুলো মানবাধিকার কমিশনের কাছে আবেদন করলে তাঁরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারেন। মামলার পদ্ধতি নালিশি মামলার ক্ষেত্রে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ প্রথমেই মামলা শুরু করে না। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নেওয়ার জন্য আদেশ দেওয়ার পর পরবর্তী সময়ে মামলা পরিচালনা করবেন। তাই নালিশি মামলার ক্ষেত্রে কেউ অভিযোগ দায়ের করে পরবর্তী শুনানির দিন যদি সংশ্লিষ্ট বাদী আদালতে হাজির না হয় কিংবা ঘটনা তদন্তের যদি অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত না হয়, তবে ম্যাজিস্টেট মামলাটি খারিজ করে দিতে পারেন। অভিযোগকারী চাইলে এর বিরুদ্ধে জজ আদালতে বা হাইকোর্টে যেতে পারেন। করণীয় পুলিশ থানায় কখনো মামলা নিতে না চাইলে বিচলিত হয়ে নিজেকে অসহায় ভাবার কোনো কারণ নেই। আইনানুযায়ী যে কেউই এ রকম পরিস্থিতিতে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে নালিশি মামলা করে আইনের আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারেন। তবে আমাদের দেশের বাস্তবতায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসহায় ও দরিদ্র বিচারপ্রার্থীরা থানায় আইনের আশ্রয় না পেলে পুলিশকে এড়িয়ে অজ্ঞতা, দীনতা ও নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার দরুন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে তাই এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠেীর জন্য সরকারের আইনি সহায়তা প্রদান কর্মসূচিও ব্যাপক পরিসরে বাড়লে উপকার পাবে সাধারণ মানুষ।

Comments

Popular posts from this blog

জামিন অযোগ্য অপরাধের ধারা সমূহ

জামিন অযোগ্য অপরাধের ধারা সমূহ: ৩৫৩, ৩৫৬, ৩৬৪, ৩৬৪ক, ৩৬৫, ৩৬৬ক, ৩৬৬খ-৩৬৯, ৩৭১-৩৭৩, ৩৭৬-৩৮২, ৩৮৫-৩৮৭, ৩৯২-৪০২, ৪০৬-৪১৪, ৪৩৬-৪৪০, ৪৪৯, ৪৫০, ৪৫২-৪৬০, ৪৬৬-৪৬৮, ৪৮৯ক, ৪৮৯খ, ৪৮৯ঘ, ৪৯৩, ৫০৫, ৫০৫ক, ৫১১।

সংবিধিবদ্ধ আইন - Jurisprudence (Class Note)

প্রশ্ন: সংবিধিবদ্ধ আইন কি? ইহা বলা কি সঠিক হবে যে, ফৌজদারী কার্যবিধি সম্পূর্ণরূপে পদ্ধতিগত আইন? বিচারিক পদ্ধতির সাধারণ উপাদানসমূহ ব্যাখ্যা কর। উত্তর: সংবিধিবদ্ধ আইন: আধুনিক জগতে আইন প্রণয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। যথাযোগ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইনগত বিধিবিধান জারী করাকে আইন প্রণয়ন বলে। ব্যাপক অর্থে আইন সৃস্টির সকল পদ্ধতিই আইন প্রণয়নের অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু প্রকৃত অর্থে আইনসভা কর্তৃক সৃস্ট আইনকে আইন বলা হয়। এরূপে প্রণীত আইনকে বিধিবদ্ধ আইন বা সংবিধিবদ্ধ আইন বলে। এই বিধিবদ্ধ আইন রাস্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী সংস্থা প্রণীত হয় এবং উহার পরিবর্তন, সংশোধন, বাতিল করার ক্ষমতা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ বা আইন প্রণয়নকারী সংস্থার নাই। তাই বর্তমান যুগে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হিসাবে আইন সভাই সংবিধিবদ্ধ আইন প্রণয়ন করে। ফৌজদারী কার্যবিধি সম্পূর্ণরূপে পদ্ধতিগত আইন: পদ্ধতিগত আইন হল ঐ সকল আইন ও বিধি যার দ্বারা স্থায়ী আইন সমূহ বাস্তবে প্রয়োগ ও কার্যকর হয়। অর্থাৎ জনসাধারণ ও সরকারের অধিকার ও কর্তব্য কার্যকর হয়। ফৌজদারী কার্যবিধি আইন হল সেই আইন যার দ্বারা স্থায়ী আইনসমূহ প্রয়োগ হয় এবং জনসাধার...

মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইন - Jurisprudence (Class Note)

প্রশ্ন : মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের সংঙ্গা দাও। এদের মধ্যে পার্থক্য দেখাও। দেওয়ানী কার্যবিধি কি নিছক পদ্ধতিগত আইন - যুক্তি দেখাও। দেওয়ানী বিচার ও ফৌজদারী বিচারের মধ্যে পার্থক্য দেখাও। উত্তর: মূল আইন : যে আইন মানুষের অধিকার নিরুপণ করে তাকে মূল আইন বলে। যেমন - দন্ডবিধি আইন, চুক্তি আইন, সুনির্দস্ট প্রতিকার আইন। পদ্ধতিগত আইন: যে আইন অধিকার প্রয়োগ করে তাকে পদ্ধতিগত আইন বলে। যেমন - ফৌজদারী আইন। পার্থক্য : ১. কোন কাজটি অন্যায় বা অবৈধ তা নির্ধারণ করে মূল আইন । পক্ষান্তরে, কিভাবে সেটি অন্যায় তা প্রমাণ করে পদ্ধতিগত আইন। ২. কোন নির্দিষ্ট অপরাধ আর্থিক দন্ডে দন্ডনীয় না কারাদন্ডে দন্ডনীয় তা মূল আইনগত প্রশ্ন। পক্ষান্তরে, সংক্ষিপ্ত বিচারের অভিযোগ এনে নিয়মিত বিচারে দন্ড দেয়া হবে কিনা তা পদ্ধতিগত আইনের প্রশ্ন। ৩. মৃত্যুদন্ডের বিধান বিলোপ করা হলে তা মূল আইনের পরিবর্তন । পক্ষান্তরে, ঋণের জন্য কারাদন্ডের বিধান বিলোপ করা হলে তা পদ্ধতিগত আইনের পরিবর্তন । “দেওয়ানী কার্যবিধি একটি নিছক পদ্ধতিগত আইন” - দেওয়ানী কার্যবিধি মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের সংমিশ্রণ। দেওয়ানী কার্যবিধিতে ১৫৫টি ধারা, দ্বিতীয়ভাগে ৫০টি ...